প্রিয় নান্দাইলবাসী,
সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর রক্তে একটি চেতনা, একটি স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নের জোয়ার! পূর্ব-বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়, নিপীড়ন, বৈষম্য চলে আসছিল যুগযুগ ধরে| পূর্ব বাংলার এক অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান| বাঙালি জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান আমাদের সকল আশা আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন| ১৯৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবীতে গর্জে উঠা বাঙালি ১৯৫২-এ মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠিত করেই ছেড়েছিল, ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং তার পথ ধরে ১৯৭১ এ বীর বাঙালির অস্ত্র ধরার ইতিহাস বাংলাদেশকে গোটা বিশ্বে মর্যাদাবান করেছে এক লড়াকু জাতি হিসেবে|
একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে স্বাধীনতা রক্ষা করা দেশের প্রতিটা নাগরিকের জন্য তা এক পবিত্র আমানত। যেকোন দেশপ্রেমিক নাগরিক স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার জন্য সংগ্রাম করবেন,এমনটিই হওয়া কাম্য। আমরা ব্যর্থ নই, সকল প্রচেষ্টাই আমরাই দৃঢ়তা দেখিয়ে অপরিসীম স্রষ্টার কৃপায় তা ভন্ডুল করে দিয়েছি। আমরা ব্যর্থ করেছি এক দলীয় শাসনের রাস্তা, আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, আমরা ধর্মীয় জঙ্গীবাদকে শান্তিতে থাকতে দেইনি, স্বৈরতন্ত্রকে উৎখাত করেছি, দেশের আপামর জনসাধারণকে বিভক্তিকরনের চক্রান্তে আমরা সাড়া দেইনি।
প্রিয় সুধী,
অনেক অপ্রাপ্তির মাঝে, প্রাপ্তিও কিন্তু কম নয়। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের দরিদ্রতার হার ছিল ৭৮ শতাংশ বর্তমানে তা ৩১ শতাংশে এসে দড়িয়েছে। গড় আয়ু ৪৭ বছর থেকে বেড়ে ৬৩ তে পৌঁছেছে, ২০২১ সালে যাহা ৮০ বছরে উন্নীত হওয়ার লক্ষমাত্রা রয়েছে। ধানের উৎপাদন ১কোটি মেঃ টন থেকে বেড়ে ৩ কোটি ৩৪ লক্ষ মেঃ টন এ পৌঁছেছে। বেশ কিছু দিন আগেও খাদ্যশষ্যের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল থাকলেও বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার সুগন্ধী চাল রপ্তানী করার উদ্যোগ নিয়েছে। স্বাক্ষরতার হার ৩০ শতাংশ থেকে বেড়ে বর্তমানে ৫৩শতাংশে দাড়িয়েছে। মাছের উৎপাদন ৭ লক্ষ মেঃ টন থেকে বেড়ে ৩০ লক্ষ মেঃ টন এ উন্নীত হয়েছে যাহা ২০২১ সালে ৪৫ লক্ষ মেঃ টন উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। দুধের উৎপাদন স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ছিল ৫ লক্ষ মেঃ টন বর্তমানে ২৬ লক্ষ মেঃ টন দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা ৭১শতাংশ থেকে কমে বর্তমানেমাত্র ৬শতাংশে এসে দাড়িয়েছে, যাহা আমাদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতারই বর্হিপ্রকাশ। মাতৃ মৃত্যুরহার হাজারে ৩৩২ থেকে কমে বর্তমানে হাজারে ১৯৪ এসে পৌঁছেছে, অন্যদিকে শিশু মৃত্যুহার হাজারে ২৫০ জন থেকে বর্তমানে ৫২ এসে দাড়িয়েছে। মানব উন্নয়নের এই নির্দেশক দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবস্থানে বাংলাদেশকে দাড় করিয়েছে।
প্রিয় এলাকাবাসী,
আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে এবং দেশের জনগণের দৃঢ়তায় আমাদের স্বাধীনতাকে অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হলেও আমরা এখনো পারিনি বেশ কিছু ব্যাপারে কাঙ্খিত লক্ষ্য| দারিদ্র্য বিমোচনে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি, দেশের সকল মানুষকে শিক্ষিত করতে পারিনি, সবার হাতে কাজ তুলে দিতে পারিনি, দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে পারিনি, দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধকে সম্মানিত স্থানে অধিষ্টিত করতে পারিনি। তবে বর্তমান গনতান্ত্রিক সরকার এলক্ষ্যে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হওয়ার লক্ষ্যে সরকার রুপকল্প ২০২১ স্থির করেছে। তথ্য প্রযুক্তর সেবা দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। মায়নমারের সাথে সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার বহুগুনে বেড়ে গেছে। পররাষ্ট্রনীতিতে বিশেষ করে ভারতের সাথে অনেক দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকারসফল হয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় যেথানে উন্নত দেশের অর্থণীতি হিমসিম খাচ্ছে, সেখানে বর্তমান সরকার অনৈতিক প্রবৃদ্ধি৬.৫শতাংশের উপরে ধরে রেখেছে, যাহা অবশ্যই বিশ্বের দরবারে ইতিবাচক দৃষ্টি এনেছে।বাংলাদেশকে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আজ দেশপ্রেমিক তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।দেশের স্বার্থকে, দেশের মানুষের স্বার্থকে ভালোবাসতে হবে সর্বাগ্রে।যে আদর্শ উন্নয়নের রুপকার হবে এমন আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে গড়ে তুলতে হবে সোনার বাংলাদেশ|
আসুন সবাই মিলে দেশ গড়ি, সবাই মিলে ক্ষুধা, দারিদ্র, দূর্নীতিমুক্ত এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
“আল্লাহ হাফেজ”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
নান্দাইল, ময়মনসিংহ
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS