ওই পরিবারের সর্বশেষ বংশধর মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী চৌধুরী বলেন, প্রায় দু’শ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে কালিপূজা হয়ে আসছে। বর্তমানে এটি দেবোত্তর সম্পত্তি।
মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত স্বপন চক্রবর্তী (৫০) জানান ‘জনশ্রুতি রয়েছে যে নীলকররা চলে যাওয়ার পর মন্দিরের পাশের বাড়ির এক হিন্দু জেলে পরিবারের নারী সদস্য স্বপ্নে দেখেন মা কালি ওই স্থাপনায় অবস্থান করছেন। তাঁকে সেখানে পুজা দেয়ার আদেশ জানানো হয়। কিন্তু ভয়ে ওই নারী এ কথা কাউকে বলেননি। পরে একই স্বপ্ন দেখানো হয় গাঙ্গাটিয়ার জমিদার পরিবারকে। সেই সময় থেকে ওই জমিদার পরিবারের উদ্যোগে এখানে পুজা চলে আসছে। স্বপন চক্রবর্তী আরও জানান, তার পরিবারের চতুর্থতম পুরুষ হিসেবে তিনি সেবায়েতের দায়িত্ব পালন করছেন। শ্যামাপুজার সময় এখানে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তখন দেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভক্তরা এসে মায়ের পায়ে নৈবেদ্য নিবেদন করেন। এছাড়াও প্রতি শনি ও মঙ্গলবারে এখানে পুজা হয়। সেবায়েত জানান, এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে প্রাচীনকালে পুজা অর্চনার বাসন-কোসন পাশের ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উঠে আসত। নদের ওই জায়গায় সারা বছর পানিতে পরিপূর্ণ থাকে। প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে স্থাপনাটি পরিদর্শন করতে লোকজন এখানে আসেন। স্থাপনাটির সামনের অংশে রয়েছে একটি লোহার সিন্ধুকের ভগ্নাংশ। সিন্ধুকটি বর্তমানে বটগাছের ভেতর চলে গেছে। ওই বটগাছের পাতা তিন রকমের।
বিরাশি গ্রামটি নান্দাইল উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত।
বিরাশি গ্রামটি নান্দাইল উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। সিএনজি ও অটোযোগে যাওয়া যায়।
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তথা ইংরেজ শাসকদের নীলচাষের ভয়াবহতার কথা অনেকেরই জানা। সেই ইংরেজদের একটি কুঠিবাড়ি রয়েছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের বিরাশি গ্রামে। বর্তমানে সেটি ‘জাঙ্গালিয়া কালিবাড়ি’ নামে পরিচিত। স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ লোকজনের ভাষ্য অনুযায়ী এটি ইংরেজ নীলকরদের ক্যাশঘর হিসেবে ব্যবহার হত। ২২ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ৩০ ফুট উচ্চতার পাকা তৈরি এই ঐতিহাসিক নীলকুঠির। স্থাপনাটির চারপাশ ঘিরে বিশাল এক বটগাছ বক্ষস্থলে ধারণ করে যুগ যুগ ধরে দাড়িয়ে আছে। নীলকরদের নিষ্ঠুর অত্যাচারের ভয়াবহতার কাহিনী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই স্থাপনাটি। এটি বর্তমানে কালি মন্দিরে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশ বিদেশের ভক্তরা এখানে এসে পূজা দিচ্ছে। নীলকরদের ক্যাশঘরটি কালি মন্দিরে রূপান্তরের কাহিনীও আরেক কিংবদন্তি। এ গ্রামের দক্ষিণ পাশে প্রবাহিত হচ্ছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। নদের ওপারের এলাকাটি গফরগাঁও উপজেলার কালিবাড়ির চর নামে পরিচিত। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়েই রয়েছে এ স্থাপনাটি। খারুয়া ইউপির বনগ্রামের বাসিন্দা অমর চন্দ্র রায় (৭৫) জানান, ঠাকুরদার মুখে শুনেছি এই স্থাপনাতে অবস্থান করে ইংরেজরা এখানে নীলচাষের তদারকি করত। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে হওয়ায় সহজেই ওরা বড় নৌকা করে কলকাতা থেকে এখানে যাতায়াত করত। নীল বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর ইংরেজরা এ স্থাপনাটি পরিত্যাগ করে চলে যায়। এরপর এর নিয়ন্ত্রণ চলে আসে জমিদারের হাতে। পরবর্তী সময়ে স্থাপনাসহ বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণভার নেয় হোসেনপুর উপজেলার ‘গাঙ্গাটিয়া জমিদার পরিবার’।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS